Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বছরব্যাপী ফল উৎপাদন

ড. মো. মেহেদী মাসুদ

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। ছোট একটি দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটির উপরে। মোট জনসংখ্যার ৭৫ ভাগ লোকই গ্রামে বাস করে, যার শতকরা ৯০ ভাগ লোকই কৃষিজীবী। কৃষি হলো দেশের একক বৃহত্তম উৎপাদনশীল খাত, যা থেকে জিডিপির শতকরা ১৭.২২ ভাগ আসে এবং দেশের মোট শ্রমিক সংখ্যার এক বিরাট অংশই (৪৫%) এই কৃষি খাতভুক্ত। আয়তনের তুলনায় অত্যধিক জনসংখ্যার চাপ থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই ক্ষেত্রে কৃষক, কৃষিজীবী ও কৃষিবিদদের অবদান কখনও অস্বীকার করা যাবে না। সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে আমাদের ফলের উৎপাদন ও উন্নয়নের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ একটি আর্দ্র ও উষ্ণমÐলীয় দেশ। এখানে আম, কলা, পেঁপে, সফেদা, আনারস, লিচু, কমলা, জাম্বুরা, পেয়ারা, নারিকেল, বাদাম, কাজুবাদাম, বেদানা, জাম, কাঁঠাল, খেঁজুর ইত্যাদি ফল ভালোভাবে জন্মে। তাই এসব ফলের চাষ করে স্বাস্থ্য, সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশে বছরে ৩.৮০ লক্ষ হে. জমিতে মোট ৪৭.০ লক্ষ মেট্রিক টন ফল উৎপাদিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ফলের বাৎসরিক চাহিদা রয়েছে ৬৭.১৭ লক্ষ মেট্রিক টন। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন কিন্তু আমরা গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ গ্রাম ফল ভক্ষণ করি। মোট চাহিদার শতকরা ৬৫ ভাগ ফল আমরা উৎপাদিত করি, বাকি ৩৫ ভাগের জন্য বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে আমাদের ফল আমদানি করতে হয়। অথচ বাংলাদেশ আবহাওয়ার প্রায় ৭০ প্রকারেরও বেশি জাতের ফল চাষের জন্য উপযোগী, যা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বিরল। তাইতো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বলেছিলেন, “এদেশের মাটি খাঁটি সোনা, এখানে যে কোন বীজ পুঁতে রাখলে চারা গজাবেই”। তাই ফল চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে  খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির অভাব দূরীকরণ, অধিক আয়ের সুরাহা, ফলের চাহিদা পূরণ ও পরিবেশের উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের ফল চাষ সম্প্রসারণ ব্যবস্থা জোরদার করা একান্ত প্রয়োজন। সারা দেশে সরকারি হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, নার্সারি, উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো ফলের নতুন জাতের উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণে ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প “বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন” সারা বছর বিভিন্ন ধরনের দেশি ও বিদেশি জাতের ফলের প্রচলন ও সম্প্রসারণে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা ও নির্দেশনায় দেশি ও অপ্রচলিত ফল চাষ যেমন- টক কুল, তেঁতুল, আমলকী, জাম, কদবেল, দেশি আমড়া, বীজবিহীন লেবু, কাঁটাবিহীন লেবু প্রভৃতি সম্প্রসারণেও আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষ ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেল চারা, ভারত হতে ৬ হাজার ডিজে সম্পূর্ণা হাইব্রিড জাতের নারিকেল চারা এবং টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত ১১০০টি আরবি খেজুরের চারা আমদানি করা হয়েছে, জাতগুলো হলো- আজুয়া, মরিয়ম, বারহি, লুলু, সুলতানা, মেডজল, ডেগলেট নুর, নিমেশি, শিশি, আনবারাহ ইত্যাদি এবং সকল চারা সারা দেশে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ ও উপক‚লীয় এলাকায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
স্মরণীয় অতীত থেকেই ফল প্রতিটি মানুষের সুখাদ্য হিসাবে সমাদৃত হয়ে আসছে। খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ বছর আগে খেঁজুরের চাষ এর সাক্ষ্য বহন করে। এছাড়া বিহারে দারভাংগার কাছে স¤্রাট আকবর কর্তৃক একলক্ষ আমগাছের বাগান ‘লাখ বাগ’ তৈরি, পর্তুগিজদের দ্বারা ভারতীয় উপমহাদেশে আনারস ও পেঁপের প্রর্বতন ইত্যাদি থেকেই বুঝা যায় ফলের প্রতি মানুষের কদর কিরূপ ছিল। বিভিন্ন পৌরাণিক সাহিত্য ও ধর্মীয় গ্রন্থাবলিতেও আমরা ফলের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারি। পবিত্র হাদিস শরিফে আছে “ফলের গাছ লাগানো সদকায়ে জারিয়া” হিসেবে গণ্য হবে। খাদ্য গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হলো সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম হয়ে বেঁচে থাকা। যে কোন খাবার খেয়ে পেট ভরানো যায় কিন্তু দেহের চাহিদা মিটিয়ে সুস্থ থাকা যায় না। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন ঘাটতি পূরণ হলেও পুষ্টি সমস্যা অনেক প্রকট। ফলে এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ পুষ্টিহীনতার কারণে নানা ধরনের রোগের শিকার হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মা ও শিশুরাই এর শিকার বেশি। পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। অধিকাংশ ফলই সুস্বাদু, পুষ্টিকর, মুখরোচক এবং তৃপ্তিদায়ক। পুষ্টিকর খাবারের উপর নির্ভর করে আমাদের জীবনের অস্তিত্ব, কর্মক্ষমতা, মেধাবৃদ্ধি, উন্নতি ও সমৃদ্ধি। পুষ্টি সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাবে সুষম খাদ্য গ্রহণের প্রতি আমরা মোটেই সজাগ নই। ফলে যারা পেট ভরে দুবেলা খেতে পায় না তারাই যে শুধু পুষ্টিহীনতার ভুুগছে তা নয়, সেই সাথে ধনীরাও অপুষ্টির শিকার থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে না। অবশ্যই বর্তমানে মানুষজনের সচেতনতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফল বাংলাদেশের অতি জনপ্রিয় ও উপযোগী উদ্যানতাত্তি¡ক ফসল, রঙ, গন্ধ, স্বাদ ও পুষ্টির বিবেচনায় আমাদের দেশি ফলসমূহ খুবই অর্থবহ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। ফলে সব ধরনের খাদ্যোপাদানই পাওয়া যায়। মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের প্রধান উৎস হলো দেশীয় ফল। এছাড়া বর্তমানে পুষ্টি মানে সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের বিদেশি উন্নতজাতের ফলের চাষ অব্যাহত রয়েছে। যেমন- আম, ড্রাগন, মাল্টা, আরবি খেজুর, ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেল, থাই পেয়ারা, অ্যারভাক্যাডো ও পার্সিমন ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের খাবারের মধ্যে ও ভিটামিন ও মিনারেলকে রোগ প্রতিরোধক খাদ্য উপাদান হিসাবে ধরা হয়। এ ধরনের পুষ্টি উপাদান তথা হরেক রকম ফল ভক্ষণে রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও হজম, পরিপাক, বিপাক রুচিবৃদ্ধি ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। ফল আমরা কাঁচা বা পাকা অবস্থায় সরাসরি খেয়ে থাকি। ফল রান্না ব্যতিত সবসময় খাওয়া যায় বিধায় এতে বিদ্যমান সবটুকু পুষ্টি পাওয়া যায়। বিভিন্ন ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধকারী উপাদান এ্যান্থোসায়ানিন, লাইকোপেন ও এন্টি অক্সিডেন্ট উপস্থিত থাকায় মরণ ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফলের অবদান অনস্বীকার্য। মানুষের খাদ্য, ভিটামিন ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধন, পরিবেশ দূষণ রোধ, কাঠের যোগান, পশুপাখির খাবার সর্বোপরি আয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্নমুখী সুবিধা আমরা ফল গাছ থেকে পেয়ে থাকি। ফল উৎপাদন ও তা পরিমাণ মতো আহারের সুযোগের অভাবে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ঘাটতি পূরণ এখনও সম্ভব হয়নি। (সুস্বাস্থ্যের জন্য জনপ্রতি প্রতিদিন গড়ে ২০০ গ্রাম ফল খাওয়ার প্রয়োজন হলেও বর্তমানে এ দেশের মানুষ মাত্র ৭৫-৮০ গ্রাম ফল খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে)। দেশে যেসব ফল উৎপাদন হয় তার প্রায় ৬০% উৎপাদিত হয় জুন-জুলাই ও আগস্ট মাসে, শীতকালে ফল প্রাপ্তির সুযোগ কম এবং এ সময় উৎপাদিত ফলের দামও বেশি। এজন্য এ সময়ে মানুষের মাঝে ভিটামিন ও মিনারেলস এর অভাব বেশি দেখা যায়। এ কারণে শীতকালে যেসব ফল (কুল, কলা, পেঁপে, তেঁতুল) উৎপাদন সুবিধা আছে সেগুলোর চাষাবাদে অধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এছাড়াও বাংলাদেশে চাষ উপযোগী বিদেশি জাতের ফল আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিভিন্ন ফলের প্রাপ্যতা বা সরবরাহ সময়কাল বিভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে। যেমন- কাঁঠাল পাওয়া যায় ফেব্রæয়ারি থেকে আগস্ট, আম পাওয়া যায় এপ্রিল থেকে আগস্ট, পেয়ারা মে, জুন, জুলাই এবং সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে। আশার কথা হলো বর্তমানে এই চিত্র অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে যেমন- পেয়ারা সারা বছর পাওয়া যায়, আম ০৮ মাস পাওয়া যায়। সময় উপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ফল উৎপাদনে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে বাংলার মানুষ আশার আলো দেখছে।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদন পঞ্জিকা
পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বলতে কি বুঝি-
পুষ্টি নিরাপত্তা বলতে আমরা বুঝি দেহের জন্য যে সকল উপাদান অতি প্রয়োজনীয় সেগুলো সঠিক পরিমাণে ও সঠিক সময়ে পাওয়াকে বুঝায়। অর্থাৎ আমাদের দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে সকল উপাদান একান্ত প্রয়োজন সেগুলো সময়মতো পাওয়ার উপায়ই হলো পুষ্টি নিরাপত্তা। কিভাবে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়-আমরা প্রতিদিন দানাদার জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করি এবং শাকসবজি ও ফলমূল খুবই কম পরিমাণে গ্রহণ করে থাকি। এমনকি যতটুকু গ্রহণ করা দরকার তার অর্ধেকও গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। যেমন, প্রতিদিন ফলমূল ২০০ গ্রাম গ্রহণ করতে হয় কিন্তু আমরা গ্রহণ করি মাত্র ৭৫-৮০ গ্রাম। এর পিছনে যে সকল কারণ রয়েছে তা একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে- ফল উৎপাদনের পরিমাণ কম, বিদেশি ফলের প্রতি অতিমাত্রায় দুর্বলতা, দেশি ফলের প্রতি অনীহা সারাবছর ফল না পাওয়া দেশি ও বিদেশি উন্নত জাতের চারা/কলমের অভাব,
গ্রামাঞ্চলে ফল গ্রহণের অভ্যস্থতার অভাব,
ফল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের সমস্যা
দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প-
দেশের ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি, চাষ সম্প্রসারণ এবং জনগণের টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রচলিত, অপ্রচলিত এবং অন্যান্য দেশি-বিদেশি সম্ভাবনাময় সব ধরনের ফলের চাষাবাদ বাড়িয়ে সারা বছর সমানভাবে ফলের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের ৮টি বিভাগের ৪৮ টা জেলার ৩৬২ উপজেলা এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৬০টা হর্টিকালচার সেন্টারের আওতাধীন উদ্যান ফসল উৎপাদনের জন্য অধিক উপযোগী স্থান প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। পার্বত্য ও দক্ষিণাঞ্চলীয় পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোকে এতে প্রাধান্য দিয়ে অন্যান্য জেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
- দেশের তিনটি পাহাড়ি জেলাসহ  অন্যান্য জেলার অসমতল ও পাহাড়ি জমি, উপকূলীয় ও অন্যান্য অঞ্চলের অব্যবহৃত  জমি এবং বসতবাড়ির  চারপাশের  জমিকে  আধুনিক পদ্ধতিতে  চাষাবাদের আওতায়  এনে  উদ্যান  ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সমতল  ভ‚মিতে অন্যান্য  মাঠ ফসলের  উৎপাদনের সুযোগ অক্ষুণœ রাখা।
- দেশীয় এবং রপ্তানিযোগ্য ফলের উৎপাদন ক্লাস্টার/ক্লাব ভিত্তিক বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা এবং উৎপাদিত  ফলের  সংগ্রহোত্তর  ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ সাথে সাথে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ সেবা  সম্প্রসারণ করা।
- উৎপাদক ও অন্যান্য সুবিধাভোগীসহ ফল ব্যবসায়ীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, মানসম্মত ফল উৎপাদন প্রযুক্তি, ফলের সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
- বিদ্যমান হর্টিকালচার সেন্টার সমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং প্রস্তাবিত নতুন হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে মানসম্পন্ন ও নতুন জাতের চারা/কলমের উৎপাদন বৃদ্ধি।
- প্রর্দশনী ও অন্যান্য টেকসই পদ্ধতির মাধ্যমে উদ্যান ফসলের আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ চাষি পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা।
- দেশে প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফলের উৎপাদনের পাশাপাশি এদেশের আবহাওয়ায় উৎপাদনযোগ্য সম্ভাব্য বিদেশি ফল, সবজি ও মসলার চাষ সম্প্রসারণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
- দলীয় সভা, মাঠ দিবস, উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, টক শো ইত্যাদির মাধ্যমে চাষি ও অন্যান্য সুবিধাভোগীদের মাঝে সচেতনতা, দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ঘটানো।
পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের সফলতা
নতুন বেশ কয়েকটি হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আরও কয়েকটি হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে, এতে করে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন উন্নত জাতের দেশি-বিদেশি ফলের চারা/কলম সহজেই পেতে পারবে এবং গড়ে উঠবে আধুনিক ফলের বাগান, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ, আর এতে দূর হবে দারিদ্র্যতা।
মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর আক্ষেপ ছিল, আমরা বাগানের আম কেন শুধু ৪ মাস খেতে পারব, ৮ মাস কেন নয়। এ ক্ষেত্রে আশার আলো দেখা যাচ্ছে গৌড়মতি, রাংগুয়াই, বারি আম-১১ চাষের মাধ্যমে আম প্রাপ্তির সময়সীমা ৮ মাসে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প আমের এই সকল জাতগুলো সংগ্রহ করে আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও লিচু প্রাপ্তির সময়সীমা আরও দুই মাস বাড়ানোর লক্ষ্যে রাজশাহী অঞ্চল থেকে কাঁঠালি জাতের লিচুর কলম সংগ্রহ করে তা সম্প্রসারণের কাজও করে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি এবং উত্তম কৃষি পদ্ধতি ব্যবহারের মাধমে আমের উৎপাদন ৩.৫ লক্ষ মে. টন থেকে ৩.৭৫ লক্ষ মে.টন বাড়ানো সম্ভব হবে এবং আম উৎপাদনের সময়সীমা ০৪ মাস থেকে ০৮ মাসে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫ লক্ষ ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেল চারা, ৬ হাজার ডিজে সম্পূর্ণা হাইব্রিড জাতের নারিকেল চারা এবং টিস্যু কালচার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রবর্তিত বেশ কিছু আরবি খেজুরের চারা এদেশে এনে দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে উপক‚লীয় এলাকায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে যে, ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেল গাছে ২৯ মাসে ফল ধরেছে। (রাজালাখ হটিকালচার সেন্টার, সাভার, ঢাকা)
প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পাহাড়ি এলাকায় ফল চাষের আওতা বাড়ানো। এরই ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে কাঁঠাল, আমের বিভিন্ন জাতের বাগান, বাদ যায়নি থাই পেয়ারা, লেবু, লিচু, লটকন, ড্রাগন ফ্রুটস, বেদানা, কমলা, মাল্টা, রাম্বুটান, পার্সিমন ইত্যাদি জাতের ফলের বাগান। এতে পাহাড়ি এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে সৌহার্দ্যতা, সৃষ্টি হয়েছে আত্মকর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত। পাহাড়ে গায়ে বুনো জাতের বৃক্ষরাজির পরিবর্তে দেখা মিলছে নতুন নতুন ফলের গাছ, যা সত্যিই অসাধারণ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে দেশি, অপ্রচলিত জাতের ফল বাগান তৈরি করার জন্য এক্ষেত্রে তিনি টক কুল, তেঁতুল, কাঁটাবিহীন লেবু, বীজবিহীন লেবু, জাম, জাম্বুরা, জলপাই ইত্যাদি ফল চাষাবাদের প্রতি অধিক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে বিলুপ্তপ্রায় দেশি, অপ্রচলিত জাতের ফলের চারা সংগ্রহ করে তা হর্টিকালচার সেন্টারে লালন-পালন করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
কাক্সিক্ষত ফলাফল
ক) বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে ফলের চাষ করা হচ্ছে এবং তা থেকে প্রায় ৪৭ লক্ষ মে. টন ফল উৎপাদিত হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুক‚ল প্রভাবে ফলের উৎপাদন প্রায় ১২ লক্ষ মে. টন বৃদ্ধি পাবে, যা শতকরা বৃদ্ধির হার হবে ২৫-৩০%। অতিরিক্ত এ উৎপাদিত ফল জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকা বাড়তি অবদান রাখবে।
খ) প্রকল্প এলাকায় ৩০০টা  কৃষক দল গঠন করা হবে, তাতে প্রতি দলে ৩০ জন করে মোট ৯০০০ জন ফল চাষি প্রত্যক্ষভাবে এ প্রকল্পের সুফল ভোগ করবে। প্রায় এক লক্ষ ফল বাগানী এবং এক লক্ষ বাড়ির আঙ্গিনার কৃষক পরিবার প্রত্যক্ষভাবে প্রকল্প সুবিধা ভোগ করবে। এছাড়া আরও প্রায় ১২ লক্ষ পুরুষ-মহিলা ফল চাষে অনুরাগী পরিবার এতে সুবিধা ভোগের সুযোগ পাবে।
গ) গ্রামে গঞ্জে ও পাহাড়ি আদিবাসী এলাকায় পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ফলচাষিদের মাথাপিছু আয় প্রায় ২৫% বৃদ্ধি পাবে।
ঘ) বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, মোটিভিশনাল ট্যুর, ফল মেলা ও উন্নত জাতের ফলের প্রর্দশনী বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে
ঙ) পাহাড়ি অঞ্চলে ফলের উৎপাদন এলাকা বাড়বে। কিষাণ-কৃষাণী বার মাসে ফল খাওয়া বিষয়ক পুষ্টি সচেতনতা আসবে এবং অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল আহারের মাধ্যমে পুষ্টির অভাব দূর হবে।
চ) সর্বোপরি প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং তা সমষ্টিগত ভাবে দারিদ্র্যতার হার কমাতে এক অনন্য সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে।
পাহাড়ি ও দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলো যেখানে কৃষির উন্নয়ন তথা ফল বাগানে ভরে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনাগুলো পূরণ হওয়ার দীর্ঘকাল অপেক্ষমাণ। বর্তমানে এ সুন্দর বিপুল সম্ভাবনাময়ী এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের লালিত স্বপ্ন অচিরেই পূরণ হবে। সারা বছর ধরে ফলের বাসকেট তথা দেশে ফল উৎপাদনে উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমির উন্নয়ন মডেলের আদর্শে পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি উপযোগী বিশাল এলাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের অব্যবহৃত অপর বৃহত্তর অংশ ফল চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে, দারিদ্র্যপীড়িত এসব এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষ সচ্ছলতার স্বাদ পাবে। আগামী ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে এদেশ সামিল হতে ফল উৎপাদন সেক্টরটি আভ্যন্তরীণ খাদ্য পুষ্টির অভাব পূরণ করে বহির্বিশ্বে তা রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে সুপরিচিত হবে, দেশের সম্পদ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
সুতরাং পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদেরকে নতুন নতুন ফলের বাগান সৃষ্টি করতে হবে, যেখানে থাকবে আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, থাকবে দেশি-বিদেশি উন্নত জাতের চারা/কলম। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ফলের গাছ রোপণ করতে সকলকেই সচেষ্ট হতে হবে পাশাপাশি দেশি প্রচলিত/অপ্রচলিত উন্নত জাতের ফলের বাগান গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশে ফল চাষের আওতা বাড়ানোর জন্য সমতল ভ‚মি ছাড়াও পাহাড়ি এলাকা, উপকূলীয় এলাকা, বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়ে, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দিরের আঙ্গিনায়, শহরে বাসাবাড়ির ছাদে প্রভৃতি জায়গায় আধুনিক ফল বাগান গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। য়
প্রকল্প পরিচালক, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৬২৬০৬৯৫

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon